মালতী রানী দেবী, স্বামী: সুমন সাহা, গ্রা: কটিয়াদী পূর্বপাড়া, ডাকঘর: কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ। আমি কি লিখব আত্নকাহিনী, সত্মব্ধ হয়ে যাই মনে পড়লে অতীত, থমকে যায় লিখতে গেলে কলম। আতংকে আতংকিত হয়ে যায় মসিত্মক,দেহ মন প্রান সব যেন অবস হয়ে যায়, কঠিন আর র্নিমম মনে হয়। তার পরেও লিপিবদ্ধ করতেছি বাসত্মব জীবনের যন্ত্রার কথা। চার ভাই বোনের মধ্যে ভাই সবার বড়। তিন বোনের মধ্যে আমি প্রথম, অভাব-অনটনের সংসার ছিল বাবার। ঠিক দিন মজুর বললেই চলে। এমন অবস্থায় আমার বয়স যখন পাঁচ ঠিক তখনি পোলিও জ্বরে আমার শরীর অবস হয়ে যায়। বাবা এদিক সেদিক ছুটাছোটি করতে করতে সার শরীর ভার হয় অবশেষে বাম পায়ে আটকে যায়। বিধি বাম হলে যা হয় আর কী। আমার ও ভাই হয়েছে। মায়ের সাথে সংসার হাল ধরেছি, বিড়ি বাধা থেকে শুর করে মানুষের কাঁথা সেলাই, হোটেলের বাটনা বাটা দিয়ে শুরম্ন হয়ে গেল জীবন যুদ্ধ।
কাজের ফাকে একটু একটু লেখা পড়াও ছিল পাশাপাশি। এভাবে আম যখন ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ঠিকা তখন শুরম্ন হল টিউশনি জীবন। টিউশনী করে নিজের লেখাপড়ার খরচ ছোট বোনদের পরিচালনা সকরার দ্বায়িত্বটাও আমার উপরই ছিল। কেননা সংসার ছিল অভাবের। মেজ বোন যখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী তখন তার বিয়ে হয়ে যায়। ছোট বোনের বিয়েও ঠিক একই সময়ে হয়। সতের বছর দুয়েক পর ভাই বিয়ে করে । পরে রইলাম আমি আমি জানি আমি প্রতিবন্ধী তাই আমাকে কেউ বিয়ে করবে না। বাবারও তেমন কোন চেষ্টা অথবা মাথা ব্যাথা ছিল না আমাকে নিয়ে। বুঝতাম সব কিছুই কিন্তু থমকে যেতাম নিজের তিকে তাকালে। টি,এল,এম ট্রেনিং ছিল আমার তাই টিউশনীটা খুব ভালই করতাম বাড়ী বাড়ী ঘুরে ছোট বাচ্চাদের পড়ানো ছিল আমার কর্ম। যা পাইতাম তা দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতাম। এবাবে আমি এস,এস,সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু ভাগ্যোর নির্মমতার কাছে আমি আবারও হেরে যাই। সবাই যখন যার যার অবস্থানে প্রতিষ্টিত আমি তখন সংসারে অবহেলিত সমাজের কাছেও বশী আমাননিয়ে সংসারে টুক টাক অশামিত্ম লেগেই থাকত। এদিকে সমাজের ক্ষমতাশীল মানুষের দৃষ্টি পড়তে লাগল আমার উপর। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন নিজেকে খুব ভাল করেই বুঝতে পারি তাই কান্না হয়ে গেল ত্যিসঙ্গী। সংসারের অশামিত্ম ধারন কারতে না পেরে বার বার মৃত্যুর দোয়ারে ছাটে ডেতাম। আত্র্হত্যা করার জন্য বহুবার চেষ্ট করেছি কিমত্ম পারিনি । সাসলে এই সমাজ সংসারে প্রতিবন্ধীদের কোন জায়দগাই নেই। এরা ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই অবহেলিত থাকে, থাকে লাঞ্ছিত। কষ্টে যন্ত্রানয় আমি বড় বেশী ক্লামত্ম। অবহেলা অপমান আমার প্রতিদিনের জীবন ছিল। এমতাবস্থায় আমার আত্নহত্যা ছাড়া আর কোন পথ সামনে ছিল না। মনস্থির করলাম দূরে গিয়ে আত্নহত্যা করে ফেলব কিন্তু না । সেটাও হলনা। পরিচয়হীন কোন একক ছেলে আমাকে বাঁচিয়ে দিল।কতগুলো নীতে বাক্য দিয়ে বুঝিয়ে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল আমিও চলে আসলাম।তারপর থেকেই তার প্রতি একটা ভাললাগা আর ভালাগা থেকেই দুর্বলতা থেকে বিয়ে বিয়ে অভধি গড়াল সম্পর্ক। বাড়ীতে প্রসত্মাব রেখেছিলাম কিন্তু রাজি ছিলনা । তই একা একাই বিয়ে করেছি ওকে। আমিও খুব একটা বিশ্বাস করতে পারিনি অপরিচিত ছেলেকে। কিন্তু কি করব ঘর বের হওয়া ছিল আমর মূল উদ্দেশ্য। আমি যে সংসারে থাকতে পারছিনা তাই জেনে শুনেই আগুনে হাত দিলাম। ভাগ্যকে তুলে দিলাম ভাগ্য বিধাতার হাতে। সেই ছেলেটাকে নিয়ে আমাদের আত্নীয় স্বজনদের যথেষ্ট অবিশ্বাস ছিল। সবাই বলেছিল তিন মাস আর ছয় মাস থাকবে আমার বর এবং আমাকে মেরে দিয়ে চলে যাবে। মা-বাবা এবং আত্নীয় স্বজনদের বিশ্বাস অর্জন করতে গিয়ে নিজের এলাকাতেই থেকে গেলাম। একে বারে ওদের চোখের সামনে। আবারে শুরম্ন হল বাসত্মাবতার সাথে নতুন করে যুদ্ধ কেননা যাকে বিয়ে করেছিলাম সে ছিল একেবারেই বেকার। তাই সবার অগোচরেসংসার চালানোর দ্বায়িত্বটা আমার উপরই দায়িত্ব ছিল। কাউকে বুঝতে দেইনি ধৈর্য্যের সাথে মেনে নিয়েছি নিজের ব্যর্থ জীবনকে। আজও আমি যুদ্ধ করি বাসত্মবাতার সাথে। ব্যর্থতা আর সফলতা পাশাপাশি রেখে দু মুটো লবন ভাত খেয়ে আমার দিন চলে যায়। তবে শংক সিধুর হাতে ওঠার পর এখন আর আমাকে মানুষ খুব একটা বিরক্ত করে না । সমাজের উচ্চ স্থানের মানুষগুলো মানবতা আর করম্ননার দৃষ্টি দিয়েই দেখে। কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কেউ আবার বাসত্মবতার সাথে যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট অনুপ্রেরনা যোগায়। যেমন মহিলা কলেজের টিচার ম্যাডাম রনারা আমাকে টাকা দেয় না সত্য কিন্তু যা দেয় তা অতুলনীয়। তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা সততার সাথে কাজ করার উৎসাহ এবং একটা দৃষ্টি সর্বদাই আমার উপর ছিল। ছত্র চায়ার মত মাতার উপর দাঁড়িয়ে ছিল যে ব্যাক্তি তিনি হলেন কটিয়াদী উপজেলা চেয়ারম্যান আইন উদ্দিন। উনার ছিল আমার পথ পদর্শক। আমি মালতা পানির সাথে চলে যেতাম বায়ুর মত উড়ে যেতাম যদি ওনাদের উপদেশ মূলক বাক্য এবং দিক নির্দেশনা পা পেতাম। তাই তো নত মস্ত্তকে বলি ওনাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার পরিবার থেকে যা পেয়েছি তা হল অবহেলা আর অপমান। বাবাকে ভাল রাখতে গিয়ে সংসারের সমসত্ম দ্বায়ভার দু:খ কষ্ট ভালবেসে মাথা পেতে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই বাবাই করল আমাকে সবচেয়ে বেশী অবহেলা। প্রতিবন্ধী জেনেও বাবা আমাকে লেখাপড়া করালো না সবার বড় মেয়ে হওয়ার সত্তেও নিদিষ্টি সময়ে বিয়ে দেওয়ার মিনিমাম চেষ্টাও করল না । ভবিষ্যতের চিমত্মা করে আমার জন্য জমানো কিছু মূলধন তাও রাখল না । ছোট বেলা থেকে বলে আসচিল তোকে আমি মেয়ে ভাবিনা ছেলে ভাবি। তাই আমার সম্পত্তির অংশীদার তোকে করে যাব। বর্তমানে বাবা আমার সেই কথাও ভুলে গেছে। কিছু মানুষের প্ররোচনায় বাবা আমাকে সম্পত্তি দিতে রাজি না । সত্যি বলছি মা থেকেও বাবাকে আমি বেশি ভালবাসতাম। কেননা বাবাই ছিল আমার জীবনের প্রিয় ব্যক্তি। সেই বাবার অবহেলা অপমান আজ আমাকে খন্ড খন্ড করে দিয়েছে। কোথায় যাব কার কাছে বলব কষ্টের কথা সেত আমার বাবা জন্ম দাতা। এই পৃথিবীর আলো দেখানো আমার বিধাতা। সেই বিধাতার কাছেই আমি অবহেলিত। আমারত বাঁচতেই ইচ্ছে করে না। একটা সময়ের পর বাবা মায়ের কাছেও সমত্মান বোঝা হয়ে যায়। আমি তার জলমত্ম প্রমান। প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধকতা যে কত ভয়ংকর তা লিখে বুঝাতে পারব না। তাই মন চায় আমার মত প্রতিবন্ধীদের কাছে ছুটে যাই। তাদের নীরব কান্না অসহনীয় কষ্ট যন্ত্রনায় শেয়ার নেই। কিছু একটা করি তাদের জন্য। ভাগ্যের কি র্নিমম পরিহাস। সাধ থাকলে কি হবে সাধ্য যে আমার নেই তবে চেষ্টা আমার মধ্যে অবশ্যই আছে। মালতী রাণী বর্তমানে মহিলা কলেজের সামনে একটি বিউটি পার্লার দিয়েছেন। উক্ত বিউটি পার্লার থেকে মাসে ২০ (বিশ) হাজার টাকা আয় করেন। তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ৮(আট) লক্ষ্ টাকা দিয়ে ০৮শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়াও ভাই বোনদের দেখাশুনা করেন। সে একজন প্রতিবন্ধি মেয়ে হয়েও নির্যাতনের বিভীষিকা ভুলে নতুন উদ্যেমে জীবন শুরম্ন করে আজ সে প্রতিষ্ঠিত। তাকে দেখে অনেকে অনুপ্রেরণা পায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস